করোনাভাইরাসঃ নিরাপদে থাকুন

বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের বিস্তার
করোনাভাইরাস, যার আসল নাম কোভিড-১৯, রোগটিকে বিশ্ব-মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অভূতপূর্ব এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে – চীন থেকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২০৯টি দেশে।

করোনাভাইরাসটা কী?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।
এই ভাইরাস ২০৯টি দেশে ছড়িয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষের (এপ্রিল ১৩, ২০২০)।
বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজারে ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্তের অর্ধেকই ইউরোপে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে স্পেন ও ইতালিতে।
২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।
নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
রোগের লক্ষণ ও মৃত্যুহার
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমন ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির সংক্রমন – লক্ষন ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক।
জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।
এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়ার হার কম (১% থেকে ২% এর মধ্যে) – তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এখন ১০% এর অধিক মৃত্যুহারও দেখা যাচ্ছে।

কোথা থেকে এলো করোনাভাইরাস?
করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে, তবে এ ধরণের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ সেটি নতুন।
অনেক সময়ই কোন একটি প্রাণী থেকে এসে নতুন নতুন ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা সাম্প্রতিক ভাইরাসটির উৎস কোনো প্রাণী। যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারিভাবে বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।
যদিও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুড়ের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।
ভাইরাসটি কীভাবে ঠেকানো যেতে পারে?
এই রোগ থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।
সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে নিম্নোক্তভাবেঃ
- মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেয়া। অত্যন্ত জরুরীকাজে বাইরে যাওয়া লাগলে সামাজিক দুরত্ব হিসেবে অন্ততঃ ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখা।
- অন্ততঃ ২০ সেকেন্ড সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা।
- স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া

রোগীদের ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানতে এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা লোকদের শনাক্ত করার জন্যও গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড বা নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজন।
বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। তবে হাত থেকে মুখে সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ার কিছু নজির আছে।
বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২৬শে মার্চ থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এসময় ওষুধের দোকান ও জরুরি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দোকান বাদে দেশের সকল বিপণিবিতান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এই ছুটির মধ্যে যেন মানুষ নিজেদের ঘরে থাকে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলে, তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তায় রয়েছে।
১লা এপ্রিল জানানো হয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনীও নিয়োজিত থাকবে।
এর আগেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ইংল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে যাত্রী আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অন্য অনেক দেশের সাথেও বিমান চলাচল স্থগিত রয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বিদেশ ফেরত যাত্রীরা হোম কোয়ারেন্টিন, সেল্ফ কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনের নিয়মকানুন মেনে চলেন।
প্রয়োজনে অথবা আপনার যদি করোনাভাইরাস লক্ষন আছে মনে হয়, টেস্ট করার জন্য সরকারী স্বাস্থ্যবাতায়নে ফোন করুন

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টেস্ট ও চিকিৎসা
করোনাভাইরাস টেস্ট সেন্টারঃ ঢাকায় অবস্থিত
১। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IEDCR), মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 02-9898796,
২। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট), মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 02-8821361
৩। আইসিডিডিআরবি, মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 09666-771100,
৪। আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (AFIP), ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট (সামরিক বাহিনীর জন্য)। মোবাইল নং 01769-016616
৫। শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ), ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শের-ই বাংলা নগর, ঢাকা। ফোন নং 02-48110117
৬। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা। ফোন নং 02-55165088
৭। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শাহবাগ, ঢাকা। মোবাইল নং 01866-637482
৮। আইডিইএসএইচআই (আইদেশী-IDESHI), মহাখালী, ঢাকা। মোবাইল নং 01793-163304
৯। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরি মেডিসিন, শের-ই বাংলা নগর, ঢাকা। ফোন নং 02-9139817
১০। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা , ঢাকা। মোবাইল নং 01769010200
করোনাভাইরাস টেস্ট সেন্টারঃ ঢাকার বাইরে
১। ককসবাজার মেডিকেল কলেজ (IEDCR field Lab)। মোবাইল নং 01821-431144
২। রংপুর মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0521-63388
৩। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0721-772150
৪। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 091-66063
৫। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (BITID), ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম। ফোন নং 031-2780426
৬। সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0821-713667
৭। খুলনা মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 041-760350 এবং
৮। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0431-2173547
করোনাভাইরাস চিকিৎকসাকেন্দ্র
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারী হাসপাতাল। সেক্টর ৬, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০। মোবাইল 01999-956290
বাংলাদেশ রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, কমলাপুর, ঢাকা। ফোন 02-55007420
মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, নয়াবাজার, ঢাকা ১১০০। ফোনঃ 02-57390860, 7390066
মিরপুর মেটারনিটি হাসপাতাল, বড়বাগ রোড ২। ফোন 02-9002012
কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতাল। লালবাগ, ঢাকা। ফোন 01726321189
আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল। সাভার, ঢাকা। ফোন 01700000000, 01712290100
জিনজিরা ২০ শয্যা হাসপাতাল। কেরানীগঞ্জ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিট। ফোন 01819 220180
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।